ফেরি ভাড়ার দেড়গুণ পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ।

 পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিবে । কিন্তু এই সেতু পার হওয়ার জন্য যানবাহনের যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি ফেরি ভাড়ার দেড়গুণ এবং যমুনা সেতুর টোলের প্রায় দ্বিগুণ । তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পদ্মা সেতুতে পৌছানোর জন্য যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মান করা হয়েছে, সেই সড়কের জন্যও যানবাহনকে আলাদা করে টোল দিতে হবে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, জনগণের স্বার্থে এই মহাপ্রকল্প গ্রহণ করা হলেও, শেষ পর্যন্ত তা কতটুকু জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে তাই এখন বড় প্রশ্ন ।

Padma Bridge
পদ্মা সেতু

বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যানবাহন ভেদে ভাড়া দিতে হয় ৭০ থেকে তিন হাজার ৯৪০ টাকা কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে যানবাহন বেঁধে ১০০ থেকে ৬,০০০ টাকা টোল দিতে হবে পদ্মা সেতু ও ফেরির টোলের পার্থক্য হল বড় বাস ২,৪০০ টাকা ফেরিতে ১,৫৮০ টাকা মাঝারি বাস ২,০০০ টাকা ফেরিতে ১৩৫০ টাকা ছোট বাচ ১,৪০০ টাকা ফেরিতে  ৯৫০ টাকা বড় ট্রাক ৫,৫০০ টাকা ফেরিতে ৩,৯৪০ টাকা মাঝারি ট্রাক ওজনভেদে ২,১০০ থেকে ২,৮০০ টাকা ফেরিতে ১,৪০০ থেকে ১,৮৫০ টাকা এছাড়া মোটরসাইকেল কার জিপ পিকআপ এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া যথাক্রমে ৩০ ২৫০ .

৪০০ এবং ৪৪০ টাকা ফেরির ভাড়ার চেয়ে বেশি সেতু বিভাগের প্রস্তাবিত এই টোল অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে তবে টোলের জন্যে যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে তা কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই এই টোল ১৫ বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে প্রতি ১৫ বছর পরপর টোলের হার ১০% হারে বাড়বে পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত করিয়া এক্সপ্রেস কর্পোরেশন এবং চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি আগামী পাঁচ বছরের জন্য টোল আদায় সেতু ও সেতুর দুই প্রান্তের যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদী শাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এর জন্য পাঁচ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে হলে ঢাকার পোস্তগোলা বা বাবুবাজার থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যে এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেখানেও আলাদা করে টোল দিতে হবে.

                         পদ্মা সেতু

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আগামী জুলাই থেকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের এর দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার এই পথে প্রবাসে ৪৯৫ এবং ট্রাকের সাড়ে ৫০০ টাকা টোল দিতে হবে তবে এই টোল আরো বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে তার মানে কেউ যদি পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যে কোন জেলায় যাতায়াত করতে চায় তাহলে তার যে খরচ হবে তার নদীপথের চেয়ে অনেক বেশি এর পক্ষে একটি যুক্তি রয়েছে আর তা হলো এক্সপ্রেসওয়ে এবং সেতু ব্যবহার করলে অনেক সময় বাঁচবে কিন্তু এই সময় বাঁচাতে গিয়ে বাসের ভাড়া যে কতগুণ বৃদ্ধি পাবে তা সহজেই কল্পনা করা যায় অতিরিক্ত বাসভাড়া গুনে যার মাশুল দিতে হবে সাধারণ যাত্রীদের যাত্রীবাহী বাসের ভাড়া যদি লঞ্চের চেয়ে বেশি হয় তাহলে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মানুষ কেন লঞ্চের এ পদ্মা সেতু পাড়ি দিবে একইভাবে পণ্যবাহী ট্রাকে যেহেতু মোটা অংকের টোল দিতে হবে সেক্ষেত্রে


পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে অথচ পদ্মা সেতু হলে পণ্য আদান-প্রদান সহজ ও সুলভ হওয়ার কথা তার মানে একদিকে যাতায়াত সহজ হবে অন্যদিকে খরচ বেড়ে যাবে সেই বাড়তি খরচ সাধারণ মানুষকেই শোধ করতে হবে পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসও এর কারণে নিশ্চয় সকলের আয় বাড়বে না কিন্তু ব্যয়ের বোঝা তাদের ঘাড়ে চেপে বসবে পদ্মা সেতু নির্মাণে কোন বিদেশী ঋণ নেই দেশের সাধারন জনগনের টাকায় এই সেতু তৈরি হয়েছে অথচ উচ্চহারের টোল দিয়ে তার ভোগান্তিও নিতে হবে সাধারণ মানুষকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই পদ্মা সেতুতে এই উচ্চহারের টোল কে নিজের বানানো ঘরে নিজেই ভাড়া থাকার সাথে তুলনা করেছে ২০০৭ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ২০১১ সালে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা 

২০১৬ সালে হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা এবং ২০১৮ সালে সেতু নির্মাণের ব্যয় আবারও বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা সম্পূর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি

তাই আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নকশা পরিবর্তন হয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে এছাড়া সময়ের সাথে সাথে প্রকল্প এলাকায় জমির মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে এসব কারণে খরচ বেড়ে যাওয়া হয়তো অযৌক্তিক নয় কিন্তু বাংলাদেশের সকল ধরনের সরকারি অবকাঠামো নির্মাণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি খরচ হয় তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই ।

পদ্মাসেতু প্রকল্পে এখনো পর্যন্ত দুর্নীতি বা অনিয়মের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত খরচ এক ধরনের সংস্কৃতিতে

পরিণত হয়েছে প্রায় ।


সকল প্রকল্প নির্ধারিত সময় বাস্তবায়ন হয় না এর ফলে প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে যায় যার বোঝা বইতে হয় দেশের জনগণকে অতীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় বহু দুর্নীতির খবর শোনা গেছে একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা বালিশের দাম ৬ হাজার টাকা মোবাইল চার্জারের দাম ২৩ হাজার টাকা ২০ টাকার হ্যান্ড গ্লাভস এর দাম ৩৫ হাজার টাকা ১৫ টাকার

টেস্ট টিউবের দাম ৫৬হাজার টাকা মাল্টিপ্লাগের দাম ৬ হাজার টাকা ৫০০ টাকার রেক্সিনের দাম ৮৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় সার কারখানায় লোহার ১ কেজি নাট বল্টুর দাম এক কোটি টাকা আধা কেজি ওজনের একটি লোহার স্প্রিং এর দাম ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ধরা হয়েছে উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে যদি লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করা না যায় তাহলে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হওয়াই স্বাভাবিক বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি যেমন সত্য ঠিক তেমনি ভাবে এই উন্নয়নের অবকাঠামো গড়ে তুলতে গিয়ে একটি শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ লোকেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে ।


এদের কারণে যে কোন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে সেটি জনগণের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে উন্নয়ন ব্যয় দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করা গেলে যে কোন প্রকল্পের খরচ সহনীয় পর্যায় থাকত এবং ওই প্রকল্পের খরচ উঠানোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিমাত্রায় টোল আদায়ের দরকার পড়তো না প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মানুষ পদ্মা সেতুর জন্য অপেক্ষা করছে অ্যামাজনের পর পদ্মা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন নদী তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজটি ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং শুরুতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহী দেখিয়েছিল ২০১১ সালে এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুলাই মাসে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় ।

এরপর বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু ।


যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বেশি বেশি শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন ।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
No Comment
Add Comment
comment url